Thursday, 1 June 2017

বিমান টিকিটে দ্বিগুণ শুল্কে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রবাসী শ্রমিক এবং দেশের রেমিটেন্স

আবুল মাল আব্দুল মুহিতের দেয়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বিমান ভ্রমনের উপর কর দ্বিগুন করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বাজেট বক্তব্যে উনি বলেছেন আকাশপথে যাত্রী পরিবহন বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই এটি রাজস্ব আয়ের একটি সম্ভাবনাময় খাত!

উনার প্রস্তাব মোতাবেক: "অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ও সার্কভুক্ত দেশের বিমানের টিকিটের ওপর আবগারি শুল্ক অপরিবর্তিত রেখে অন্যসব ক্ষেত্রে দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করা হবে। বর্তমানের মতো অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ও সার্কভুক্ত দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এয়ারলাইন্স টিকিটের ওপর আবগারি শুল্কের পরিমাণ ৫০০ টাকায় অপরিবর্তিত থাকবে। তবে সার্কভুক্ত দেশ ব্যতীত এশিয়ার অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ১ হাজার টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকা শুল্ক কাটা হবে।

এছাড়া ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে বিদ্যমান দেড় হাজার টাকার পরিবর্তে শুল্ক হার হবে তিন হাজার টাকা। এয়ারলাইন্স টিকেটের সঙ্গে এই শুল্ক আদায় করতে হবে।
"

এবার আসুন উনার এই শুল্ক প্রস্তাবে কারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেটা বোঝার চেষ্টা করি।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন ভ্রমনে কেবলমাত্র উচ্চমধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তরাই আকাশপথ ব্যবহার করে থাকেন; দেশের মধ্যবিত্ত আর নিম্মবিত্তদের ভরসা এখনো বাস, ট্রেন আর লঞ্চে। অন্যদিকে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে যাতায়াতকারী যাত্রীদের ৮৭% এর গন্তব্য ভারত (২০১৩ সালের হিসাব), এর পরেই নেপালের অবস্থান। এই দুই দেশে যাতায়াতকারীদের মধ্যে যারা মধ্যবিত্ত ও নিম্মবিত্ত, তারাও সড়কপথ বা রেলপথই ব্যবহার করেন, কেবলমাত্র উচ্চমধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তরাই আকাশপথে এই দুই দেশের যাত্রী। এই দুই দেশে বাংলাদেশের কোন শ্রম বাজার নেই। বরং বাংলাদেশে ভারতের প্রায় ৮ লাখ লোক চাকুরী ও ব্যবসা করে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের বৈদেশিক শ্রম বাজারের বড় অংশই মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে। এই শ্রমিকদের রক্তপানি করা বৈদেশিক মূদ্রা বিদেশে পাচার করে 'অর্থ রফতানীকারক দেশ' হিসেবে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। এখন এই শ্রমিকদের রক্ত সরাসরি চুষে খাবার জন্য তাদের বিমান ভ্রমনের উপর কর বসানো হচ্ছে।

মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে যদি সমূদ্রপথে কম খরচে যাওয়া যেত, তাহলে এই শ্রমিকরা সেই পথেই যেত; যেমনটা তারা ঢাকা-বরিশাল যাতায়াতের সময় লঞ্চের ডেকে কিংবা ঢাকা-রংপুর যাতায়াতের সময় বাসের ছাদে চড়ে। নিতান্ত নিরুপায় হয়েই শ্রমিকরা বিদেশে তাদের কর্মস্থলে আকাশপথে যাতায়াত করে।

কাজেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এবং সার্কভূক্ত দেশে আকাশভ্রমনের শুল্ক বৃদ্ধি না করে অন্য দেশে আকাশপথে ভ্রমণের উপর শুল্ক দ্বিগুন করলে এর চাপটা পরবে ঐ গরিব শ্রমিকদের উপর। এই শ্রমিকদের উপর চাপ পরলে সেটা ফলে দেশের রেমিটেন্স আয়ের উপরও নেতিবাচক প্রভাব পরবে।

আবুল মাল আব্দুল মুহিত আক্ষরিক অর্থেই একটা গরিব মারা বাজেট দিয়েছেন।