Friday 1 May 2020

অভিজিৎ রায় হত্যা, আনসার বাংলা ৭ সমাচার এবং একটি কুইজ

ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা সংক্রান্ত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে ২০১৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস লিখেছিলাম। রিপোর্ট করে সেই স্ট্যাটাসটি মুছে দেবার কারণে আমার এই ব্লগে লিখে রাখলাম। তথ্যসূত্রের সবগুলো লিংক আর্কাইভ করে রেখেছিলাম। কারণ, কিছু খবর ইতিমধ্যেই মুছে দেয়া হয়েছে।

অভিজিৎ রায় হত্যা, আনসার বাংলা ৭ সমাচার এবং একটি কুইজ

নামটা বেশ! আনসার বাংলা ৭, অনেকটা ০০৭ জেমসবন্ড টাইপের গন্ধ আছে। এই জিনিসের নাম শুনেছিলাম, ফেসবুকে প্রথম দেখি গত বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিহত হবার পর। এরা ফেসবুক এবং টুইটারে সেটার দায় স্বীকার করে পোস্ট দিয়েছিলো। দুইদিন পরেই খেয়াল করেছিলাম পেজ এবং টুইটার একাউন্ট দুইটাই বন্ধ। গতকাল অভিজিৎ হত্যার পর এই সংগঠন দায় স্বীকার করেছে খবর পেয়ে আবার ওদের টুইটার একাউন্টে গেলাম।

প্রথম আলোর বর্ণনা অনুযায়ী ঘাতকরা অভিজিৎকে আঘাত করেছে বাংলাদেশ সময় ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৫ তারিখ রাত পৌনে নয়টার দিকে এবং অভিজিৎকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে রাত সাড়ে দশটার দিকে

আর আনসার বাংলা এই খবর নিশ্চিত এবং পূন: নিশ্চিত হয়ে ধীরে-সুস্থে তাদের টুইটার একাউন্ট থেকে হত্যার দায় স্বীকার করে টুইট করেছে রাত এগারোটা বারো মিনিটে!

তারপর তারা একের পর এক টুইটে এই হত্যার জন্য আনন্দ প্রকাশ করে গেছে। মজার বিষয় হচ্ছে, আনসার বাংলা ৭ নামের এই সংগঠনের টুইটার একাউন্ট থেকে অভিজিৎ রায়কে ফলো করা শুরু হয়েছে আরো প্রায় সাত ঘণ্টা পরে; বাংলাদেশ সময় ২৭ ফেব্রুয়ারী সকাল ছয়টা ৩১ মিনিটের পোস্টের পর।

এরপর আরো কয়েকটি পোস্ট দিয়ে মিডিয়ায় নিজেদের দায়িত্ব স্বীকার প্রতিষ্ঠিত করার পর তারা তাদের টুইটার একাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। আমার খুব নিরীহ প্রশ্ন হচ্ছে, আনসার বাংলা ৭ অভিজিৎকে হত্যার পর কেন তার নিষ্কৃয় টুইটার একাউন্ট ফলো করা শুরু করলো? তাদের হাতেই অভিজিৎ নিহত হয়েছে, তারা নিশ্চই এটা আশা করে না যে, অভিজিৎ এর টুইটার হ্যান্ডেল থেকে আরও টুইট হবে। পাশাপাশি তারা একই সময়ে আসিফ মহিউদ্দিনের টুইটার একাউন্ট ও ফলো করতে শুরু করেছে। এরা এতদিন অভিজিৎ এবং আসিফ মহিউদ্দীনকে ফলো না করে হঠাৎ আজ থেকে ফলো করার কারণ কি? এর গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা একটাই, ডাইভারশন সৃষ্টি করা। যাতে সবাই এই আনসার বাংলার লাটিমের লেত্তি ধরে ঘুরতে থাকে, আর আসল খুনী পার পেয়ে যায়।

ঘটনাস্থলে পুলিশ কেন নিষ্কৃয় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো এবং খুনীরা কেন সেই সুযোগে নিরাপদে পালিয়ে গেলো, এই রহস্যের মিমাংসাও হয়নি; হবে কিনা, সেটাও জানি না।

আরেকটি বিষয় যথেষ্ট খটকা লাগানিয়া।
অভিজিৎ হত্যার মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে আওয়ামী লীগ নেতা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসিম বলেছিল, "দেশে একজন জঙ্গি নেত্রী আছেন। তিনি হলেন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। জঙ্গিদের দমন করতে হবে। তাদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে।" এবং অভিজিৎ হত্যার ঘন্টা খানেকের মধ্যেই আওয়ামী পন্থী শিক্ষক নেতা ও ১৯৭৫ সালে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সমর সেনের উপর হামলার পরিকল্পনাকারী সাবেক জাসদ গণবাহিনী নেতা ড. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, "অভিজিৎ হত্যার দায় নিতে হবে খালেদাকে"। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আশরাফ নামে আরও একজন বলেছেন, "ব্লাডি খালেদা সবকিছুর জন্য দায়ী"। আবার হত্যার ঠিক পরের দিনই সেই মোহাম্মদ নাসিম বলেছে, "মান্না-খোকার ফোনালাপের বলি অভিজিৎ।"

বাংলাদেশে ব্লেইম গেইমের রাজনীতি নতুন না। কিন্তু হত্যার আগে-পরে এত সিনক্রোনাইজড দোষারোপ দেখে কিন্তু হত্যার অন্য কোন প্লট এর কথা মাথায় উঁকি দিচ্ছে। সহসাই যদি এই হত্যাকাণ্ডের সুরাহা না হয়, তাহলে অন্যান্য সুরাহাবিহীন হাই প্রোফাইল খুনের মত এটিও স্টেট স্পন্সর্ড হাই প্রোফাইল কিলিং এর মধ্যে তালিকাভুক্ত হবে।

হত্যার মোটিভ অনুসন্ধানে কে লাভবান, 'হু ইজ দ্য বেনিফিসিয়ারী' এই প্রশ্নটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন। এই হত্যাকাণ্ডের রাজনৈতিক ব্যবহার আওয়ামী লীগ যেভাবে করতে শুরু করেছে, তাতে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য মার্কিন তদন্ত দলের আসা খুবই প্রয়োজন।

এবার একটি কুইজঃ
বলুন তো অভিজিতকে নাস্তিক ব্লগার হিসেবে তালিকাভুক্ত করে কোন সংগঠন সর্বপ্রথম তার বিচার দাবী করেছিলো এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে সেই তালিকা জমা দিয়েছিলো?"

-২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
ঢাকা।

দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে- এই স্ট্যাটাস লেখার পর ৫ বছর সময় চলে গেছে। অভিজিৎ এর খুনীরা আজও সনাক্ত হয়নি। সেই দুঃখ বুকে নিয়েই অভিজিৎ এর বাবা অজয় রায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।